সম্পাদকীয়

একাত্তরের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কঠিন কাজ এখন জাতির সামনে

মার্চ ২৮, ২০২৩ ৩:৫০ অপরাহ্ণ | সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়:

স্বাধীনতা অর্জন যত সহজ, রক্ষা করা তার চেয়ে বেশি কঠিন। কথাটা গুণীজনের। আমরা উনিশ একাত্তর সালের ২৬ মার্চ সেই সাহসটি দেখিয়েছিলাম। স্বাধীনতা অর্জন করতে অস্ত্র ধরেছিলাম। সেই যুদ্ধে জয়ও এসেছিলো।

আমরা ছিলাম পরাধীন, উপনিবেশিত, অবদমিত এবং শোষিত। যুগ যুগের সেই অপশাসন ছিঁড়ে ২৬ মার্চ একাত্তর রচিত হল বাঙালি নামক জাতির স্বাধীন সত্তার। অস্ত্র ধরেছিল হানাদার পাকবাহিনির বিরুদ্ধে। নয় মাস সশস্ত্র লড়াই করে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যে সূর্য উদিত হল জাতির ভাগ্যাকাশে, তা অর্থবহ করে তোলার গুরুদায়িত্ব পড়লো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আমরা বহন করে চলেছি সেই অমূল্য লাল-সবুজ পতাকার মর্যাদা রক্ষার দায়ভার।

কিন্তু একটি পতাকার জন্মের কথা যত সহজে বলা যায়, তাকে দেশের মানুষের জন্য অর্থবহ করে তোলার কাজটা ত সহজ নয়। এই পতাকা বহন করার সার্থকতা নিহিত রয়েছে সেই দেশের জনগণের শোষণমুক্তি কতটা হল, তার ওপর।

মুক্তিযুদ্ধের তেপান্ন বছর পার হলেও শেষ হয়নি আমাদের সেই আর্তনাদ, সেই চিৎকার। শোষণমুক্তি ঘটেনি, বরং বিপন্ন মানুষ আরো নানা মাত্রায় বিপন্ন হয়েছে।

স্বাধীনতা পেল জাতি। কিন্তু নতুন শোষকরা থাবা উচিয়ে এলো জাতির ঘাড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার হারিয়ে গেল কবে, কোথায়? তার ঠিকানা খুঁজতেই তেপান্ন বছর পার।

বাংলাদেশ এখন একাত্তরের সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশ নয়, আঠারো কোটি মানুষ বাস করে এই ভুখণ্ডে। জনসংখ্যার এই চরম ঊর্ধগতির দেশে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি, ঘুষ এবং লুটপাট নানা অপরাধ। বেড়েছে উন্নয়নও। বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির অন্তরালে সাধারণ মানুষ নি?েষিত হচ্ছে, বাড়ছে শোষণের মাত্রা। এমনকি ন্যায়বিচারের স্থলে বাড়ছে অবিচার।

আমরা জানি, স্বাধীনতালাভ আর মুক্তিলাভ এক বিষয় নয়। যদিও একটার সাথে আরেকটার হাত ধরাধরি এমন যে, একটা বিনে আরেকটা অর্থহীন। আমরা একাত্তরে স্বাধীনতা লাভ করেছি, কিন্তু জাতির মুক্তি এনে দিতে পারিনি।

শোষণমুক্তির এই আকাঙক্ষার ফলবান বৃক্ষ দেশের মাটিতেই জন্ম নেবে একদিন। জাতির শোষণমুক্তি আর সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াইটা কবে শুরু হবে, কারা করবেন, সেই সময় ও সেই প্রজন্মের অপেক্ষায় রয়েছে জাতি।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পর জাতি ভেবেছিল, এই বুঝি চাওয়া শেষ, রক্তসাগর দিয়ে?দেনাও চুকেছে, এবার পাওয়ার পালা। কিন্তু দুর্ভাগা জাতির এই আশা অচিরেই ¤øান হয়ে যায়। আসে একের পর এক সামরিক শাসন, দু:শাসন। নানা কৌশলে অবিচারের বিস্তার ঘটতে থাকে। শোষক ও লুটপাটকারি সৃষ্টি হতে থাকে সমানতালে। চলে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার, জাতিকে পঙ্গু করার শত ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত।

এবারের স্বাধীনতা দিবসে বার্তা একটাই- যে জঞ্জাল জমা হয়েছে আমাদের সামনে সেসব সরাতে হবে, নাহলে স্বাধীন দেশটি নিয়ে আমাদের গর্ব ক্রমশঃই মৗান হতে থাকবে।

‘বীরের জাতি’ বলে যে অঙ্গীকার সামনে রেখে আমাদের গর্বের ইতিহাস রচিত হয়েছিল একাত্তরে, সেই প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের কঠিন কাজ এখন জাতির সামনে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, যুদ্ধ বিজয়ী জাতি সেই প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নেও সক্ষম হবে একদিন। অবশ্যই শোষকের নিপাত হবে ও শোষিতের লড়াই জয়লাভ করবে একদিন। সেই প্রতীক্ষায় এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের ‘আশায় বসতি’।

স্বাধীনতা দিবসে বাংলার সকল শহীদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তিম অভিবাদন আর নিত্য সংগ্রামী জনতার প্রতি অনিঃশেষ শুভ কামনা।

আরও পড়ুন »

বর্ণবাদী ইডিএলকে রুখতে হবে

ব্রিটেনজুড়ে বর্ণবাদী ইডিএল-এর চলমান তাণ্ডব রুখতে লণ্ডনের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গত সপ্তাহে সাউথপোর্টে তিন শিশু মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং রাস্তায় পথচারীদের...

অভূতপূর্ব অবিস্মরণীয় এক বিপ্লব

বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন খুবই জরুরী অভূতপূর্ব এক বিপ্লব হয়ে গেলো দেশে। দেড় দশকের একক রাজনৈতিক বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এই পরিবর্তনের মূল কারিগর দেশের ছাত্র-জনতা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নজির সৃষ্টি করেছে...

‘আসুন, ফিলিস্তিনীদের জন্য ‘ঈদ মোবারক’ পাঠাই

আসছে ১৬ জুন রোববার ব্রিটেনের মুসলমানরা পালন করবেন এবারের পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এক দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা উদযাপন করবেন মহান এ দিনটি। ইসলামের অনুসারীদের জন্য বছরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিনগুলোর একটি হচ্ছে এই ঈদুল আজহা। একে কোরবানীর ঈদ নামেও...

স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী, মুক্তি কত দূরে?

স্বাধীনতা অর্জন যত সহজ, রক্ষা করা তার চেয়ে বেশি কঠিন। কথাটা গুণীজনদের। উনিশ একাত্তর সালের ২৬ মার্চ সেই অমিত সাহস নিয়ে বাঙালি স্বপ্নের স্বাধীনতা অর্জনের পথে নেমেছিলো। সশস্ত্র সেই অসম যুদ্ধে জয়ও এসেছিলো।  যুগ যুগের অপশাসন ছিঁড়ে পরাধীন, উপনিবেশিত, অবদমিত এবং শোষিত...

বাংলাদেশে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক

মানুষ মারার চরম নিষ্ঠুর বাণিজ্য কবে বন্ধ হবে? বাংলাদেশের হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে রোগী ও সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের কমতি ছিলো না আগেও। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার নামে বাংলাদেশে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর মানুষ মারার চরম নিষ্ঠুর...

আরও পড়ুন »

 

ট্রাম্পের ভাঁওতাবাজি এখন ঘাটে ঘাটে আটকে যাচ্ছে

গাজীউল হাসান খান ♦ নিয়তি বলে যে কথাটি প্রচলিত রয়েছে, রাজনীতির ক্ষেত্রে তা কতটুকু প্রভাব ফেলে, আমার জানা নেই। পশ্চিমা জগতের কট্টরবাদী রাজনীতিক, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্র পরিচালনায় এখন বহুমুখী অনভিপ্রেত চাপের মুখে নিয়তির খেলায় গা...

ইরান আক্রমণ নিয়ে ফাঁদে পড়েছেন ট্রাম্প

গাজীউল হাসান খান গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘দিশাহীন ও বেপরোয়া’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো গুরুতর ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত পাল্টাতে খুব বেশি সময় নেন না। এর মূল কারণ হচ্ছে ট্রাম্প খুব ভেবেচিন্তে কোনো কথা বলেন না। তবে তিনি নিজেকে বিশ্বের...

কেয়ার ফর সেইন্ট অ্যান’ চ্যারিটির উদ্যোগে টাওয়ার হ্যামলেটসের হাজার বছরের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

কেয়ার ফর সেইন্ট অ্যান’ চ্যারিটির উদ্যোগে টাওয়ার হ্যামলেটসের হাজার বছরের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

হাসনাত চৌধুরী ♦ লণ্ডন, ২০ এপ্রিল: টাওয়ার হ্যামলেটসের অবস্থান ও এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে দুর্লভ শিল্পকর্মের এক বিশেষ প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। ‘কেয়ার ফর সেইন্ট অ্যান' চ্যারিটির উদ্যোগে লাইম হাউজের সেইন্ট অ্যান চার্চে এই প্রদর্শনীর...

ভবিষ্যতের সংঘাত ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা নিন

গাজীউল হাসান খান ♦ পতিত হাসিনা সরকারের দীর্ঘ শাসনকালের একটা সময়ে, সম্ভবত শুরু থেকে মাঝামাঝি কোনো অবস্থায়, দেশের কোনো একটি গণমাধ্যমে একটি চমৎকার স্লোগান দেখতে পেতাম। সেটি হচ্ছে : ‘আপনি বদলে যান, সমাজ বদলে যাবে।’ চারিত্রিক দিক থেকে আমরা সবাই যদি পরিশুদ্ধ হতে পারি, তাহলে...