পত্রিকা ডেস্ক♦
লণ্ডন, ২২ মে: বিএনপি এই সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে। তা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সমর্থকদের কথা চিন্তা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে নানা আলোচনা ছিলো ভোটের মাঠে। ফলে দুই চৌধুরীর ভোটের লড়াই দেখার জন্যও অপেক্ষায় ছিলেন সিলেটবাসী। একজন আওয়ামী সরকারের আমলে দুইদফা নির্বাচিত বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। আরেকজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কিন্তু দুই চৌধুরীর লড়াই আর হচ্ছে না। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তাঁর এমন ঘোষণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরীর বিজয়ের পথ অনেকটা সহজ হয়ে গেলো।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীআগামী ২১ জুন সিলেট সিটির ভোট। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। ২৫ মে মনোনয়ন ফরম বাছাই, ১ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ শেষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামতে পারবেন প্রার্থীরা। ২২ মে পর্যন্ত একমাত্র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া আর কেউ প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা যায়নি। প্রার্থীতা জমা দেয়ার শেষ দিনেও বড় কোনো চমক থাকবে-এমন কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। কেননা, সিলেট আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। যারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন তারা সকলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেছে নেয়া প্রার্থী আনোরুজ্জামান চৌধুরীকে মেনে নিয়েছেন। অন্তত সিলেট আওয়ামী লীগে আনোয়ারুজ্জমানকে নিয়ে প্রকাশ্য কোনো বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে কয়েক দিন ধরেই সিলেট নগরজুড়ে গুঞ্জন ছড়ায়, বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে না এলে প্রার্থী হতে পারেন একসময়ের আলোচিত নেতা বাবরুল হোসেন ওরফে বাবুল। বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন সিলেট পৌরসভার দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক একসময় সিলেট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। পরে অবশ্য জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে দলটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। এখন তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। আরিফুলের বিকল্প হিসেবে একটি পক্ষ বাবরুলকে প্রার্থী করতে তৎপরতাও চালায়। আরিফুল হকের প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণার পর যোগাযোগ করা হলে বাবরুল হোসেন শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেছেন, সিলেট নগরের অনেকেই তাঁকে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। কিন্তু তিনি প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর তাঁর স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী প্রার্থী হচ্ছেন-এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ খবর সত্য নয় বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এমন পরিস্থিতিতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ভোটের মাঠে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ ছাড়াই বিজয়ী হবেন- সেটি অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরী সিলেটের মেয়র হবেন- এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ অন্য কোনো প্রার্থী না থাকলে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে বিনা-প্রতিদ্বন্ধিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
গত ২০ মে শনিবার নগরের রেজিস্টারি মাঠে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সভায় প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন আরিফুল হক চৌধুরী। বর্তমানে সিলেট কিংবা সারা দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ভোট নিয়ে মানুষের আস্থা এমন তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে যে কোনো নির্বাচন হলেই মানুষ প্রথমেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলে, ভোট দিনে দিতে পারবে নাকি আগের রাতেই শেষ হয়ে যাবে।’ মেয়র আরিফুল হক বলেন, ‘ভোটাধিকার নিয়ে সাধারণ জনগণের মন থেকে আস্থা তো উঠেই গেছে, এমনকি আওয়ামী লীগসহ তাদের জোটের অনেক নেতাও এখন ভোটের অবস্থা দেখে আড়ালে-আবডালে নিজেরাই লজ্জা পান।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সিলেট সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে ব্লুপ্রিন্ট রেডি হয়ে গেছে। কীভাবে ভোট ডাকাতি করা যায়, তার নীলনকশার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল সম্পন্ন হয়েছে।’ ‘মর্মাহত’ আনোয়ারুজ্জামান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ভোটের লড়াইয়ে এলে নির্বাচন অনেক প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ হত বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বিএনপি নেতা আরিফুল নির্বাচনে না আসার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আনোয়ারুজ্জামান শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, “তাঁর (আরিফ) এই সিদ্ধান্তে আমি মর্মাহত। এখনও আরও তিন দিন বাকি আছে, আমি আশা করি, তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন। দলকে বুঝিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে তিনি নির্বাচনে আসবেন।”
প্রায় এক দশক মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে আরিফ অনেক ভাল কাজ করেছেন- এমন প্রশংসা করে আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরী বলেন, “সিলেটের মানুষ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করুকএটাই আমি চাই। সিলেটে নির্বাচনের পরিবেশ নাই, উনার এই বক্তব্য আসলে ঠিক না।” চাপে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলররা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সরে দাঁড়ানো নতুন করে চাপে ফেলেছে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলরদের। নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তাঁদের কেউ কেউ এখন আগের অবস্থানে নেই। সম্ভাব্য নতুন প্রার্থীরাও দ্বিধাদ্বন্ধে। দুজন প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, দলীয় নির্দেশনার পরও সিলেট সিটি করপোরেশনের বিএনপিপন্থী সব কাউন্সিলর নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরে দলের চাপ বাড়লে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন সিসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তবে বাকিরা এখনো তেমন ঘোষণা দেননি। তাঁরা নির্বাচন করতে চান। কিন্তু দলীয় নির্দেশনার পর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত তাঁদের কারো কারো মনোবলে চিড় ধরিয়েছে।