ভোট দিতে না পারলে চিৎকার দেবেন
বাংলাদেশে দায়িত্বশীলদের যাচ্ছেতাই কথাবার্তা যেনো স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র তারা আবোল-তাবোল বকেই চলেছেন। বৈঠক কিংবা সমাবেশ হোক আর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবই হোক হাস্যকর এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে এদের বোধ কিংবা রুচিতে যেনো বাধে না। ক্ষেত্রবিশেষে মিথ্যাচারেও তাদের কেউ কেউ বেশ পারঙ্গম।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের সিলেটে দেয়া এক পরামর্শ শুনে মানুষ হাসবে না কাঁদবে তা ঠিক করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। সিলেটের এক জনাকীর্ণ সভায় তিনি যে চমৎকার! পরামর্শ দিয়েছেন তার তারিফ না করে উপায়?নেই। তিনি বলেছেন, ‘ভোট না দিতে পারলে, চিৎকার করবেন, আমরা ব্যবস্থা নিবো।’
আমরা মনে করি, উপস্থিত সুধীজন ও সাধারণ মানুষ তার এ দায়িত্বহীন বক্তব্যে হেসেছেন। এমনই হাস্যকর ও দায়িত্বহীন বক্তব্যদাতা ব্যক্তিরাই আমাদের নির্বাচন কমিশনের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হন এবং জনগণের আস্থার স্থানটি দখল করে আবোল-তাবোল বকেন। আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ আবোল-তাবোল বক্তব্য চরম হতাশাজনক। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, সিলেটে একজন ভোটার সঠিকভাবে ভোট দিতে না পারলে তিনি আপনার পরামর্শ মতো ‘চিৎকার’ দিলেন। এরপর কমিশন ঢাকায় বসে কী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে সক্ষম? অভিযোগটা আমলে নেবেন, এইতো? কিন্তু এসব ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের আমলনামা কি মানুষের আস্থা জাগায়? আর সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের মুরোদ থাকলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটারের চিৎকার দেওয়ার দরকার পড়তো কি? এই দেশটিতে ন্যূনতম মানের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনকে দায়িত্বশীলরা বছরের পর বছরের ধরে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন বলে অন্য দেশ এখন তার দেশের ভিসানীতি আরোপ করে আমাদের শাসায়। এতে দায়িত্বশীলদের লজ্জা হয় কিনা জানিনা কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আপনি কী খেয়াল করেছেন আপনার এই ‘চিৎকার দেবার’ সুপরামর্শের অর্থ কী দাঁড়ায়? আমাদের কাছে এর সহজ অর্থ হচ্ছে- জনগণের ভোট ডাকাতির আয়োজনকে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত চলে আসতে উৎসাহিত করা।
ডাকাতদের তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেয়া। কারণ, ভোটকেন্দ্রে যাবার আগেই তো নির্বাচন কমিশনের মাস্তানী সামাল দেবার কথা। একজন নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার যখন লুট হয়, তখন চিৎকার দিলে কী লাভ হবে? এ অধিকার রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করার দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের। তা না পারলে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন। কিন্তু তা করবেন না। বরং জনগণকে কী করতে হবে তার প্রেসক্রিপশন দেবেন। যে সিলেটে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার চিৎকার করার পরামর্শ দিলেন সেই সিলেটেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রধান আসামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেই অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এরপরও আপনাদের মতো দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ জনগণকে কেমন করে এতো বোকাসোকা ভাবেন আর তাদের সামনে আবোল-তাবোল বলেন তা বিস্ময়েরই বিষয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হবার পরও আমরা ন্যায়-অন্যায় বোধে নেই, বুদ্ধিতে নেই, রুচিতে নেই, আস্থায় নেই, ব্যবস্থা গ্রহণেও নেই। চিৎকারেই পড়ে রইলাম! এই সময়ে ভোট কেড়ে নেয়ার ঘটনা কম ঘটেছে? দিনের ভোট আগের রাতে সম্পন্ন হয়নি? বরিশালে মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিমের ওপর হামলা প্রসঙ্গে আপনি বলেছেন, তার ওপর হামলা হলেও ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়নি। তিনি (ফয়জুল করিম) হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন, এমন তথ্য তুলে ধরে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে আপনি পাল্টা জিজ্ঞেস করেছেন উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? এরপর তো আর কোন কথা খাটে না। চিৎকার করেও না।