জানুয়ারি থেকে কার্যকর আরো কঠোর নয়া বিধান
পত্রিকা প্রতিবেদন ♦
লণ্ডন, ০৭ আগস্ট: যুক্তরাজ্যে থাকার বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের অবস্থান ও বসবাস আরও কঠিন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে এসব অভিবাসীকে যাতে কেউ চাকরি বা বাসা ভাড়া দিয়ে সাহায্য করতে না পারেন, সেজন্য বিশাল অঙ্কের নতুন জরিমানা ঘোষণা করেছে সরকার।
সরকারের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে চাকরি দিলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ৪৫ হাজার পাউণ্ড জরিমানার শিকার হবে। আর একাধিকবার একই অপরাধ করলে এই জরিমানার পরিমাণ হবে বৈধ কাগজপত্রহীন প্রতি কর্মীর জন্য ৬০ হাজার পাউণ্ড করে। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এ ধরনের একজন কর্মী দিয়ে ধরা পড়েন সেই প্রতিষ্ঠান ৪৫ হাজার পাউণ্ড দিয়ে রেহাই পাবে। একই প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে একই অপরাধ করলে তাকে বৈধ কাগজপত্রহীন কর্মী নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৬০ হাজার পাউণ্ড করে জরিমানা গুনতে হবে।
এতদিন বৈধ কাগজপত্রহীন কর্মী নিয়োগের জন্য প্রথমবার প্রতি কর্মীর জন্য ১৫ হাজার পাউণ্ড করে জরিমানা করা হতো। আর দ্বিতীয় বা তার পরবর্তীতে একই অপরাধের জন্য কর্মী প্রতি ২০ হাজার পাউণ্ড করে জরিমানার বিধান ছিলো। সে হিসেবে নতুন ঘোষণায় বৈধ কাগজপত্রহীন কর্মী নিয়োগের জরিমানা তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
একইভাবে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের যাতে কেউ বাসায় আশ্রয় না দেন এবং তাদের কাছে বাসা ভাড়া না দেন- সেজন্য বৈধ কাগজপত্রহীনদের বাসায় রাখায় জরিমানাও বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এতদিন বাসায় বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে ‘লজার’ হিশেবে বা সঙ্গে রাখার জন্য জনপ্রতি প্রথমবার ৮০ পাউণ্ড করে জরিমানা হতো। নতুন ঘোষণায় এই জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে প্রথমবারের জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার পাউণ্ড করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় বা তার পরবর্তীতে একই অপরাধে ধরা পড়লে জরিমানা হবে জনপ্রতি ১০ হাজার পাউণ্ড।
একইভাবে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীর কাছে বাসাভাড়া দিলে (ওকুপেন্ট বা টেনেন্ট) এতদিন বাসার মালিককে প্রথমবার জনপ্রতি ৫শ পাউণ্ড জরিমানা করা হতো। পরবর্তীতে একই অপরাধে ধরা পড়লে জরিমানা করা হতো জনপ্রতি ৩ হাজার পাউণ্ড করে। নতুন ঘোষণায় বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীর কাছে বাসাভাড়া দেয়ার জরিমানা প্রথমবারের জন্য বাড়িয়ে ১০ হাজার পাউণ্ড করা হয়েছে। আর আবারও একই অপরাধ করলে জরিমানা হবে জনপ্রতি ২০ হাজার পাউণ্ড।
বৈধ কাগজপত্রহীনদের আশ্রয় দেয়া সংক্রান্ত সরকারের নতুন ঘোষণা নিয়ে ৬ আগস্ট রোববার প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নতুন জরিমানার এই বিধান আগামী জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। চাকরিদাতা ও বাসার মালিকদের জন্য জরিমানা বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে হোম অফিস বলছে, কাজের ও বাসস্থানের সুযোগ অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাজ্যে আগমনের ক্ষেত্রে অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে কাজ করছে।
অভিবাসন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রবার্ট জেনরিক বলেছেন, জরিমানা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে যুক্তরাজ্য আগমন ঠেকাতে সহায়ক হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী এবং বাসার মালিকরা অবৈধ কর্মসংস্থান ও বাসাভাড়া প্রদানের মাধ্যমে জঘন্য মানবপাচারকারীদের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, চাকরি কিংবা বাসা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ কাগজ-পত্র যাচাই না করার জন্য কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিয়ম ভঙ্গের জন্য সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই বড় অঙ্কের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
যুক্তরাজ্যে ঠিক কত সংখ্যক লোক বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাস করছেন তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০২০ সালে গ্রেটার লণ্ডন অথোরিটির একটি জরিপে অনুমান করা হয়েছে যে, ৫ লাখ ৯৪ হাজার থেকে ৭ লাখ ৪৫ হাজারের মত লোক যুক্তরাজ্যে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাস করছেন যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যে অবৈধদের চাকরি দেয়ার দায়ে ২০১৮ সাল থেকে মোট ৪ হাজারটি জরিমানা ইস্যু করা হয়েছে। এসব জরিমানায় মোট ৭৪ মিলিয়ন পাউণ্ড আদায় করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীর আগমন ঠেকানোকে তাঁর সরকারের অন্যতম প্রধান্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে নৌপথে আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের প্রবেশ বেড়েই চলছে। ২০১৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে প্রায় ৩শ অভিবাসী যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার।
নয়া বিধানে অবৈধ অভিবাসীকে চাকরি দেয়ার জরিমানা ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার পাউণ্ড এবং বাসাভাড়া দেয়ার জরিমানা ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার পাউণ্ড করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এই সিদ্ধান্ত।