নিমিষেই শেষ একটি পরিবার দুই সন্তানসহ পিতার মৃত্যু
পত্রিকা ডেস্ক:
লন্ডন, ১১ সেপ্টেম্বর: একটি সড়ক দুর্ঘটনা পুরো পরিবারের অস্তিত্ব বিলীন করে দিলো! নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো সবকিছু। দুই সন্তানসহ মৃত্যুবরণ করেছেন পিতা। স্ত্রী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন হাসপাতালে। তবে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী প্রাণে বেঁচে থাকলেও স্বামী এবং দুই সন্তানের পাশাপাশি হারিয়েছেন তাঁর অনাগত সন্তানকেও। কারণ দুর্ঘটনায় মারাত“কভাবে আহত হয়ে তাঁর গর্ভপাত ঘটেছে। পরিবারটি বাংলাদেশি। বার্মিংহামের কাছের শহর ওয়ালসলে ছিলো তাদের বসবাস। বাংলাদেশে আদিবাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের লেস্টারশায়ারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন- আলমগীর হোসেন ওরফে সাজু (৩৬), তাঁর ৯ বছর বয়সী ছেলে জাকির হোসেন ও ৪ বছর বয়সী মেয়ে মাইরা হোসেন। একই দুর্ঘটনায় আলমগীরের স্ত্রী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত¡া ছিলেন। নিহত আলমগীর হোসেনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। বার্মিংহাম শহরের নিকটবর্তী ওয়ালসলে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল কালাম। জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লেস্টার ও নানিটনের মধ্যবর্তী এ-ফাইভ সড়কের হিঙ্কলি এলাকায় পণ্যবাহী একটি লরির সঙ্গে ওই পরিবারের প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরপরই আশপাশের লোকজন পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসকে খবর দেয়। পাশাপাশি আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে। খবর পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে যায় ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ইস্ট মিডল্যান্ডস অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, লেস্টারশায়ার ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস ও লেস্টারশায়ার পুলিশ। আলমগীর প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন। তার কারের সঙ্গে পণ্যবাহী একটি লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলেই আলমগীর ও তাঁর ছেলে জাকির নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় মেয়ে মাইরা। আলমগীরের চাচা আহমদ মোসা বলেন, তাঁর ভাতিজা (আলমগীর) সপরিবার অবকাশ কাটাতে গিয়েছিলেন। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা এখনো তাঁদের জানায়নি পুলিশ। লাশ তিনটি এখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি পুলিশ। স্বজনরা জানান, ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পরিবার নিয়ে ঘুরতে বার্মিংহাম শহরের নিকটবর্তী ওয়ালসালের প্লেক শেরিডান স্ট্রিট থেকে গাড়ি নিয়ে লেস্টারে যে ট্রিপে গিয়েছিলেন আলমগীর হোসেন সাজু। ঘুরাঘুরি শেষে ফেরার পথে হিঙ্কলি এলাকায় একটি পণ্যবাহী লরির সঙ্গে তাঁর গাড়ির সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তাদের বহনকারী বিএমডবিøউ কারটি সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আলমগীর হোসেন ও তার ছেলে জাকির হোসেনের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালের নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে চার বছরের মেয়ে মাইরা হোসেন। আর হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে চিকিতসাধীন রয়েছেন তাঁর স্ত্রী।
লেস্টারশায়ার পুলিশ তাদের ফেইসবুক পেজে জানিয়েছে, “এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতি প্রকাশ করছি। আমরা নিহতদের পরিবারকে পূর্ণ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখব এবং সংঘর্ষের তদন্তের জন্য যা ঘটেছে তার সম্পূর্ণ পরিস্থিতি অনুসন্ধান করব।” যুক্তরাজ্যে বসবাসরত হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নূর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল বলেন, আলমগীর হোসেন সাজু বার্মিংহামের একজন ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব। সড়ক দুর্ঘটনায় ২ সন্তানসহ তার নিহতের খবর অত্যন্ত বেদনার। এটি মেনে নেয়ার মত নয়। দ্য সান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দুর্ঘটনায় লরি ড্রাইভার খুব একটা আহত হননি। দুর্ঘটনার পর পর সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো এবং জরুরি সেবাকাজ চলা পর্যন্ত সড়কটি বন্ধ ছিলো। মধ্যরাত ১২টা ২৫ মিনিটে সড়কটি পুরনায় চালু করা হয়। সিরিয়াস কলিউশন ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের ডিটেকটিভ কনস্টেবল আনা এণ্ড্রু বলেন, এটি একটি মারাত“ক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা। জরুরি সেবাগুলো দুর্ঘটনাস্থলে আসার আগেই আশপাশের লোকজন হতাহতদের সাহায্যে এগিয়ে আসে বলে আমরা জেনেছি। এই সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য কারো কাছে থাকলে তা লেস্টার পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
]